দুবেলা, স্বস্তিকা বিশ্বাস ( সম্পাদনা- দিশা সাহা মন্ডল)ঃ কলকাতার হাইকোর্টের সেই রায়, যা প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীর নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। তা দেশের শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্টও বহাল রেখেছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতি ও জালিয়াতির কারণে কলুষিত হয়েছে—এটা সংশোধনযোগ্য নয়। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না বলেন, “নির্বাচন প্রক্রিয়া পুরোপুরি দুর্নীতিপূর্ণ ও জালিয়াতির শিকার।” আদালত নিশ্চিত করেছে যে, জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ বাতিল করা হবে, তবে যারা যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন তাদেরকে বর্তমান বেতন ও অন্যান্য সুবিধা ফেরত দিতে হবে না।
যারা পূর্বে অন্যান্য সরকারি দপ্তরে কর্মরত ছিলেন এবং তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়া অসংশোধিত হিসেবে চিহ্নিত হয়নি। তাঁদেরকে পুনরায় আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় তাঁদের চাকরিতে বিরতি ছাড়াই বর্তমান বেতন ও বেতন বৃদ্ধির নিশ্চয়তা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের মধ্যে সুষ্ঠু নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আদেশ দেয়। প্রত্যক্ষ প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত প্রতিবন্ধী প্রার্থী সোনা দাসের নিয়োগকে বিশেষভাবে বিবেচনা করে আদালত নির্দেশ দে। তাঁকে বর্তমান বেতনে কাজে রাখতে হবে যতক্ষণ না নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এতে, প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের যথাযথ সেবা ও সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে।
বাম নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে। বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী সরকারের অপদার্থতার কথা বললেন। তাঁর মতে, “খুবই অস্বস্তির ব্যাপার যে পশ্চিমবাংলায় ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করল। আমাদের সরকার একবছরও যোগ্যদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি; বরং অযোগ্যদের পাশে দাঁড়িয়ে যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি বাতিল করে ফেলেছে।” তিনি আরও বলেন, “সরকারের এই দুর্নীতির কারণে হাজার হাজার ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকারকে অবিলম্বে সরিয়ে দিয়ে, যোগ্যদের চাকরির জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে আসতে হবে।”
এসএসসি নিয়োগ ঘোটালার মামলায় বিচার ও রাজনৈতিক মঞ্চ উভয়েই কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার দাবি তুলে ধরেছে। সুপ্রিমকোর্টের রায় স্পষ্ট করে দেয় যে, দুর্নীতির শিকার প্রার্থীদের নিয়োগ বাতিল করে, ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নিয়োগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। এখন প্রশ্ন হলো, রাজ্য সরকার কীভাবে যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি নিশ্চিত করে, সেই সাথে বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট ক্ষতির প্রতিকার ঘটাতে পারে।