দুবেলা, অলিভিয়া মন্ডল: বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজারে মন্দার আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়তেই সোমবার মার্কিন শেয়ার বাজারে ব্যাপক পতন দেখা যায়। ডাও জোন্স, নাসডাক এন্ড এসঅ্যান্ডপি ৫০০ এই তিনটি প্রধান সূচকে বড়সড় ধস নামে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া শুল্ক নীতির কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্নক ছড়ায় ফলে তারা নিরাপদ সম্পদে বিনিয়োগের জন্য শেয়ার বিক্রি অবধি করতে শুরু করে।
সোমবার মার্কিন স্টক মার্কেটে ড্যাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ (DJIA) ১২০০ পয়েন্টের বেশি পতন ঘটায় যা ৩.১৭ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৩৭,১০১.৮৮ পয়েন্টে। পরে সূচকটি কিছুটা ফিরে দাঁড়ালে আবার পতন ঘটতে থাকে ৩৭,৮৪৮.৪৩ পয়েন্টে পৌঁছায়, গত দিনের তুলনায় ১.২৭ শতাংশ কম। নাসডাক সূচকের দিনের শুরুতেই ৪ শতাংশ পতন ঘটে যা ১৪,৯৬৪.৫৬ পয়েন্টে পৌঁছায় কিন্তু পরে তা সামান্য বেড়ে ১৫,৫৬৮.৬২ পয়েন্টে পৌঁছায়। আবার এসঅ্যান্ডপি ৫০০সূচক ৩.৫৭ শতাংশ কমে ৪৮৯২.৭১ পয়েন্টে পৌঁছায় কিন্তু বেলা বাড়লে এটিও কিছুটা বেড়ে ৫,০৩৪.৪৮ পয়েন্টে এসে দাঁড়ায়, যা গত দিনের তুলনায় ০.৭৮ শতাংশ কম।
শেয়ার মার্কেটের এহেন পতনের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি পোস্ট এর মাধ্যমে স্পষ্ট হুশিয়ারি দিয়ে বলেন ‘তিনি কোনো ভাবেই মাথা নোয়াবেন না’ অর্থাৎ শেয়ার বাজারে পতন হলেও নিজের শুল্ক নীতিতে তিনি নমনীয় হবেন না। এইদিন আমেরিকাবাসীর উদ্যেশ্যে তিনি এও জানান ‘আমেরিকার সামনে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে। যা বহু দশক আগে হওয়া উচিত ছিল। দুর্বল হবেন না, বোকা হবেন না। Panican (দুর্বল ও বোকাদের তৈরি নতুন দল) -এর সদস্য হবেন না, ধৈর্য্য রাখুন।
শুধু মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ই নয়, ইউরোপ ও এশিয়ার বড় বড় বাজার গুলিতেও সোমবার বিপুল পতন দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের FTSE 100 সূচক বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে ৫ শতাংশের বেশি নেমে যায়। হংকংএর হ্যাং সেনগ সূচক সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায়, ৩,০০০ পয়েন্টের বেশি কমে ১৩.২২ শতাংশ পতন সহ ১৯,৮২৮.৩০ পয়েন্টে শেষ হয়। জাপানে নিক্কেই ২২৫ সূচকও ২,৬০০ পয়েন্টের বেশি পড়ে ৩১,১৩৬.৫৮ পয়েন্টে থেমে যায়।
স্টক বাজার বিশ্লেষক অংশুল জৈন (লক্ষিশ্রী ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটির প্রধান গবেষক) দাও জোন্স এখন ‘ওভারসল্ড টেরিটরি’- তে প্রবেশ করেছে এবং বাজারে এই পতন চললে সূচকটি ৩৬,০০০ পয়েন্ট পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। তিনি আরো বলেন “গত সপ্তাহে সূচকটি ৫ শতাংশ পড়েছে এবং একটি ‘ডাবল টপ’ গঠন ভেঙেছে। গত ৯ সপ্তাহে মোট ১৫ শতাংশ পতনের ফলে এটি এখন তীব্রভাবে বিক্রি হওয়া অবস্থায় রয়েছে। যদি সূচকটি ৩৮,২৬৪ পয়েন্টের নিচে চলে যায়। গত সপাহে নাসডাক ৬সপ্তাহে সূচকটি ২১ শতাংশ পড়েছে, কিন্তু গত সপ্তাহে ৯.৭৭ শতাংশ পতন হয়েছে। সূচকটি ১৭,৪৩৫ পয়েন্টে শক্তিশালী সাপোর্ট স্পর্শ করেছে। এখন থেকে ‘ডেড ক্যাট বাউন্স’ আশা করা যায় । যদি সূচকটি এই সপ্তাহে ১৭,৪৩৫-১৭,৫০০ সীমার ওপরে থাকে, তবে আশার আলো দেখা যেতে পারে।
শুক্রবার ৪এপ্রিল মার্কিন বাজারে এক রক্তক্ষয়ী দিন যায়। ওই দিন চিন ঘোষনা করে, তারা যুষ্ট্রস্ত্র থেকে আমদানি হওয়া সমস্ত পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক বসাবে। এই ঘোষণার ফলে বাজারে ব্যাপক বিক্রি শুরু হয়। ওই দিন ডাও জোন্স ২,২০০ পয়েন্টের বেশি পরে ৫.৫০ শতাংশ কমে ৩৮,৩১৪.৮৬ পয়েন্টে শেষ হয়। নাসডাক ৯০০ পয়েন্ট পড়ে ৫.৮২ শতাংশ কমে ১৫,৫৮৭.৭৯ পয়েন্টে পৌঁছায়। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ৫.৯৭ শতাংশ কমে ৫,০৭৪.০৮ পয়েন্টে পৌঁছায়।
বিশ্বব্যাপী এই ধসের ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে, এবং অনেক মানুষই এখন নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকেছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রিবাউন্ড গুলো কেবলমাত্র টেকনিকাল- বাজারে স্থায়ী উন্নতির কোনো ইঙ্গিত নয়। মার্কিন অর্থনীতির ভবিষ্যত এখন অনেক টাই নির্ভর করছে ট্রাম্প প্রশাসনের পরবর্তী নীতিগত সিদ্ধান্তের উপর।