কিডনি সুস্থ রাখতে চান, তবে এই খাবার খেতে হবে!

Spread the love

দুবেলা, স্বস্তিকা বিশ্বাস:  মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে কিডনি অন্যতম। কিডনি আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল বের করে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখে। তবে অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের কারণে কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। তাই কিডনির সুস্থতা বজায় রাখতে এমন কিছু খাবার আমাদের নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত।  যা কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। নিচে এমন ৭টি উপকারী খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যা কিডনিকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১. ব্লু বেরি
ব্লু বেরি একধরনের সুপারফুড, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল সমৃদ্ধ। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিডনির কোষকে ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিক্যালের হাত থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি, ব্লু বেরি ফাইবার ও ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস, যা কিডনির প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ব্লু বেরি খান, তাদের কিডনির কার্যকারিতা তুলনামূলক ভালো থাকে। আপনি চাইলে ব্লু বেরি স্মুদি, ওটমিল বা সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।

২. ক্র্যানবেরি
ক্র্যানবেরি কিডনির পাশাপাশি ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) প্রতিরোধে কার্যকরী। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রাকৃতিক উপাদান ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং মূত্রনালিকে পরিষ্কার রাখে। ক্র্যানবেরির রস কিডনির টক্সিন বের করতে সাহায্য করে এবং এটি পটাসিয়াম ও সোডিয়াম-এর ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক। তাই প্রতিদিন সামান্য পরিমাণ ক্র্যানবেরি বা তার জুস পান করলে কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

৩. ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ (স্যামন, সারডিন, ম্যাকারেল)
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ যেমন স্যামন, সারডিন ও ম্যাকারেল প্রদাহ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি কিডনির রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে কিডনিকে চাপমুক্ত রাখে। ওমেগা-৩ হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে, যা কিডনির কার্যকারিতার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সপ্তাহে অন্তত দুইবার এই ধরনের মাছ খেলে কিডনির সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

৪. লহসুন
লহসুন কিডনির জন্য অত্যন্ত উপকারী, কারণ এতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি (প্রদাহনাশক) ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কিডনির অতিরিক্ত কাজের চাপ কমায়। লহসুন শরীরের টক্সিন নির্গমনে সহায়ক এবং রক্ত পরিষ্কার রাখে। রান্নার সময় কাঁচা বা সামান্য ভাজা লহসুন ব্যবহার করলে এটি স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী হয়।

৫. জলপাই তেল (অলিভ অয়েল)
জলপাই তেল স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের অন্যতম উৎকৃষ্ট উৎস। এতে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা কিডনির প্রদাহ কমায় ও কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। জলপাই তেল নিয়মিত গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা কিডনির জন্য উপকারী। রান্নার সময় অন্যান্য ক্ষতিকর তেলের পরিবর্তে জলপাই তেল ব্যবহার করলে কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

৬. লাল বেল পিপার
লাল বেল পিপার কিডনি-বান্ধব সবজির মধ্যে অন্যতম। এতে ফসফরাসের মাত্রা কম থাকায় এটি কিডনির জন্য নিরাপদ, বিশেষ করে যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত। এটি ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা কিডনির কোষগুলিকে সুরক্ষা দেয় এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। সালাদ, স্যুপ বা রান্নায় লাল বেল পিপার ব্যবহার করলে কিডনির জন্য উপকারী হয়।

৭. আপেল
আপেল একটি সহজলভ্য ও পুষ্টিকর ফল, যা কিডনির সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ, যা শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করতে সহায়তা করে। আপেল রক্তের সুগার ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে বাধা দেয়। প্রতিদিন একটি আপেল খেলে কিডনির কার্যক্ষমতা উন্নত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

কিডনি সুস্থ রাখার অতিরিক্ত টিপস:

  • শুধুমাত্র খাবারের মাধ্যমেই কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষা সম্ভব নয়, এর পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন– প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে কিডনি সহজে টক্সিন বের করতে পারে এবং কার্যক্ষমতা ভালো থাকে।
  • লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন – অতিরিক্ত লবণ কিডনির জন্য ক্ষতিকর, তাই অতিরিক্ত প্রসেসড ফুড ও সোডিয়ামযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
  • চিনি ও ক্যাফেইন গ্রহণ কমান – অতিরিক্ত চিনি ও ক্যাফেইন কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন– নিয়মিত ব্যায়াম কিডনির রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে ও প্রদাহ কমায়।সুস্থ কিডনি আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনির সুরক্ষায় উপযুক্ত খাবার বেছে নেওয়া অত্যাবশ্যক। উপরোক্ত ৭টি খাদ্য উপাদান কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে খাদ্যাভ্যাস নির্ধারণ করা উচিত। বিশেষ করে, যদি কিডনি সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক খাদ্য নির্বাচন করা শ্রেয়। সুস্থ জীবনধারা, সঠিক খাবার, পর্যাপ্ত পানি ও নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম কিডনি স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক হতে পারে।

Related posts

Leave a Comment