যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে রহস্য!

Spread the love

দুবেলা, রিয়া বিশ্বাস: বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সবসময়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও এক পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে রহস্য। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আর্ট বিল্ডিং এর সামনে পার্কিং লটে চলছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছাত্রছাত্রীদের ভিড়ে মুখর ক্যাম্পাস হঠাৎই স্তব্ধ হয়ে যায় যখন খবর আসে ক্যাম্পাসের পুকুর থেকে তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী অনামিকা মন্ডলের দেহ উদ্ধার হয়েছে। কীভাবে এই মৃত্যু ঘটল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ময়না তদন্তে উঠে এসেছে যে জলে ডুবে মৃত্যু। তবে ঘটনাটি বেশ রহস্যজনক।

বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছিল, সেই অনুষ্ঠানের পারমিশন ছিল বিকাল চারটে থেকে রাত আটটা পর্যন্ত।তাহলে কেন রাত দশটার পরও অনুষ্ঠান চলছিল ক্যাম্পাসে। এই অনুষ্ঠানের দায়িত্বে কারা কারা ছিলেন। এমনকি মৃত অনামিকা ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল, সেই রাত্রে তার ডিপার্টমেন্টের আর কারা কারা ছিল তার সাথে ? যে পুকুরটিতে ডুবে অনামিকার মৃত্যু হয় সেই পুকুরটি ঠিক পাশে ছিল ইউনিয়ন রুম। এছাড়াও এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাহলে কি এই অনুষ্ঠানের নেশা করা হচ্ছিল। এমনকি অনামিকাকে জল থেকে উদ্ধার করার পরে তার মুখ থেকে মদের গন্ধ পায় তদন্তকারীরা। এসব হাজারো প্রশ্ন ঘোরাঘুরি করছে এই রহস্যজনক মৃত্যুকে ঘিরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরে জলে ভেসে থাকতে দেখে দ্রুত পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরের ধারে ভিড় জমে যায়। কিছুক্ষণ পর উদ্ধার করা হয় ছাত্রীর নিথর দেহ। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। তবে এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি তদন্তকারী দল।

এর আগেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এবং সেই ঘটনাগুলির সঠিক কারণ উদ্ধার করা যায়নি। ২০২৩ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল থেকে পড়ে গিয়ে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনাতেও নানা প্রশ্ন উঠেছিল নিরাপত্তা ও নজরদারি নিয়ে। অভিযোগ ছিল, হস্টেল ও ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরার অভাবের কারণেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বের করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। আদালত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা বসানোর নির্দেশ দেয়।কিন্তু আজও যাদবপুর ক্যাম্পাসে নেই পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা বসানো হয়নি। যেখানে-সেখানে অন্ধকার, নিরাপত্তার কর্মীর উপস্থিতিও যথেষ্ট নয়। রাত নামলেই ক্যাম্পাসের একাধিক জায়গা কার্যত নজরদারিহীন হয়ে পড়ে। ফলে এই ধরনের দুর্ঘটনা বা অপরাধ ঘটলেও স্পষ্ট প্রমাণ মেলে না। এমনকি মেয়েদের হোস্টেলের সামনে ও রাতে বেড়ানো নিরাপদ নয় বলে দাবি করছে একাধিক ছাত্র-ছাত্রীরা। তারা সঠিক নিরাপত্তা এবং নজরদারির দাবি করেছেন বহুদিন ধরে বলে জানিয়েছে।

তবে ঘটনার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন মহল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বারবারই আলোচনায় এসেছে তার গৌরবময় ঐতিহ্যের জন্য। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে একের পর এক মৃত্যু ও নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে অভিভাবক মহলেও।প্রশ্ন উঠছে হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও কেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়নি? কেন আজও ছাত্রছাত্রীরা নিশ্চিন্তে পড়াশোনা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারছেন না? উত্তর খুঁজছে গোটা রাজ্য।

Related posts

Leave a Comment