দুবেলা, রিয়া বিশ্বাস: উত্তর 24 পরগনা জেলার গাইঘাটা থানা সংলগ্ন ঠাকুরনগর শিমুলপুর এলাকা থেকে এক ভুয়ো কনস্টেবল কে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত ওই যুবকের নাম অঙ্কিত ঘোষ। গত এক বছর ধরে ভুয়ো পুলিশ সেজে প্রতারণা করে চলেছে।তবে ‘ভুয়ো পুলিশ’ অঙ্কিতের গল্পটা ঠিক কেমন? কেনই বা পুলিশ সেজে ঘুরতে হল তাকে? এত দিন ধরে সে চাকরি করছেন মাসের শেষে স্যালারিও বা কিভাবে দিতো বাড়িতে। এসব প্রশ্নই ঘোরাঘুরি করছে সাধারণ মানুষদের মনে।
প্রত্যেকদিন সকালে আয়রন করা পুলিশের পোশাক,বুট, ফিটফাট হয়ে বেরিয়ে পড়তেন স্টেশনে, গন্তব্য বিকাশ ভবন। সেখানেই নাকি ছিল তার পোস্টিং। তবে মাঝে মাঝে প্রায়সই ডিউটিতে চলে যেতেন কখনো মায়াপুর কখনো বা গঙ্গাসাগর। তাঁর পোশাক, চলাফেরা, এমনকি পুলিশের ভাষাও ছিল অবলীলায় ঠোঁটস্থ। কিন্তু সম্প্রতি দিন কয়েক আগে বনগাঁ লোকালে কয়েকজন পুলিশের সাথে বচসায় জড়ায় অঙ্কিত। সন্দেহ হয় তাঁর কর্মকাণ্ড ঘিরে। এছাড়াও লোকাল ট্রেনে ঝামেলা করে মারধর পর্যন্ত করতে দেখা গেছে পাবলিকদের।পুলিশি মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয়, আদৌ এমন কোনো কনস্টেবল এখানে কর্মরত কি না।
কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, এমন কোনো কনস্টেবলের অস্তিত্বই নেই! এরপরই গাইঘাটা থানার পুলিশ নিজেরাই তদন্তে নামে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের জালে ধরা পড়ে অঙ্কিত। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় পুলিশের পোশাক, জুতো, ব্যাজ, এমনকি একটি ভুয়ো আইডেন্টিটি কার্ডও। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অঙ্কিত আসলে স্থানীয় এক যুবক, যিনি পুলিশের চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। চাকরির পরীক্ষায় বারংবার ব্যর্থ হওয়ার পর, সে নিজের মতো করে ‘পুলিশ’ হওয়ার পথ বেছে নেয়।
গ্রেপ্তাররের পর অঙ্কিত কে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সে জানায়, সে পুলিশের পরীক্ষায় বসে ছিল একাধিক বার। শেষে মেন পরীক্ষা পাশও করেছিল এবং তারপরেই বাড়িতে,আশেপাশে এবং বন্ধু-বান্ধবকে সবাইকে জানিয়ে দেয় যে সে চাকরি পেয়েছে। কিন্তু ভাগ্যদোষে ভাইবা পরীক্ষার সময় সে আর উত্তীর্ণ হতে পারেনা। মান সম্মান লজ্জাবোধের খাতিরে সে এই অভিনয় করতে বাধ্য হয়েছে। ব্যারাকপুরে গিয়ে পুলিশি গোটা কয়েক পোশাক আর কিছু সরঞ্জাম নিয়ে আসে। তারপর থেকেই এক একটা মিথ্যা অভিনয়। সামাজিক মাধ্যমে একের পর এক ছবি পোষ্ট। বিভিন্ন জায়গায়তে ও যেতেন এই বেশে। সেখানে গিয়ে রীলস এবং ছবি তুলে তা সমাজ মাধ্যমে দিতেন। ভুয়ো কিছু সার্টিফিকেট ও তৈরি করেছিল অঙ্কিত।
প্রতিমাসে পরিবারের লোক মাইনের কথা জিজ্ঞেস করলে ব্যাংকে সমস্যা, একাউন্ট এ সমস্যা এই ধরণের কথা বলতেন। বাড়ি থেকে টাকা নিয়েই নাকি এই সব কাজ করে গেছেন। তবে এই বয়ানের কতটা সত্যতা যাচাই করছে পুলিশ। কিন্তু প্রশ্ন সে শুধু পুলিশ সেজে নিজের মনোরঞ্জন করতেন?নাকি পুলিশি পোশাক পড়ে বিভিন্ন দোকান, বাজার থেকে অধিকার দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করতেন? তার তদন্ত শুরু করেছে গাইঘাটা থানার পুলিশ।

প্রতিমুহূর্তের খবর পেতে লাইক করুণ II দুবেলা নিউজ