দুবেলা, অলিভিয়া মন্ডল: প্রবল বৃষ্টি হোক কিংবা প্রখর রোদ, মোহালির পিসিএ স্টেডিয়াম অথবা মুল্লানপুরের নতুন মাঠ অশ্বিনী কুমারের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ছিল আকাশ সমান। তাইতো কখনো সাইকেলে, কখনো লিফটে, কখনো বা অটোতে চেপে সময়মত পৌঁছে যেতেন মাঠে। একসময় যার ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যাত্রা করার খরচ ছিল ৩০ টাকা, আজ সেই ছেলেই আইপিএলের মঞ্চে ৩০ লাখ টাকায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান দলে জায়গা করে নিয়েছে।
তার বাবা হরকেশ, যিনি গ্রামে দেড় একর জমির মালিক আজও চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। তিনি বলেন “আমার আজও মনে আছে, ও আমার কাছে ভাড়া বাবদ ৩০ টাকা চাইত, আর যখন মুম্বাই ইন্ডিয়ান টিম ওকে ৩০ লাখ টাকায় দলে নিল, বুঝলাম—ওর প্রতিটি টাকার মূল্য আছে।” তাই ছেলের সাফল্য দেখে তিনি মনে করে বলেন, ফিরে দেখেন সেই আগের দিন গুলো, যখন রাত ১০টায় প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি ফিরে আবার পরের দিন ভোর ৫টায় তার ছেলে মাঠে ছুটে যেত ক্রিকেট খেলার জন্য।
২০১৪ সালে গ্রামের সরকারি সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের মাঠে বন্ধু অমন ঠাকুরের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিল অশ্বিনী। শুরুর দিকে পিসিএ একাডেমিতে অভিষেক শর্মা, রমনদীপ সিং ও অর্শদীপ সিং-এর সঙ্গে খেললেও, ২০১৯ সালে ট্রফি পেয়ে পাঞ্জাবের হয়ে অভিষেক ঘটে তার। বড় ভাই শিব রানা বলেন, “ও আমাদের সকালবেলা স্কুল মাঠে পৌঁছতে বলত, যেখানে আমরা ওর বিরুদ্ধে ব্যাট করতাম। সন্ধ্যায় আবার অন্য মাঠে গিয়ে খেলত। সাধারণ ক্যানভাস জুতো পরেই অধিক গতির বোলিং করত, আর বন্ধুরা টাকা তুলে ওর জন্য ক্রিকেট বল ও স্পাইক কিনত।”
২০১৬ সালে মোহালি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কোচ হরবিন্দর বাইদওয়ান প্রথমবার পিসিএ স্টেডিয়ামের কাছে এমসিএ গ্রাউন্ডে অশ্বিনীকে দেখেন। বাঁহাতি প্লেয়ার হওয়ায় সে ২০০ জন প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে আলাদা নজর কেড়েছিল। তিনি বলেন “আমরা কোচ হিসেবে সবসময় ভালো শারীরিক গঠনের খেলোয়াড় খুঁজি, আর অশ্বিনীর সেটা ছিল। আমরা ওর ল্যান্ডিং ফুট এবং ফ্রন্ট রানিং টেকনিক দেখেছিলাম। সময়ের সঙ্গে ও ভালো বাউন্সারও বল করত। ওর ফার্স্ট মুভমেন্টের মাধ্যমে বল সুইং করানোও ওর জন্য বড় সুবিধা হয়েছিল। একবার এক আন্তঃজেলা ম্যাচের শেষ ওভারে ২০ রান খেয়েছিল, কিন্তু সেই সন্ধ্যাতেই নেটে ফিরে স্লোয়ার আর ইয়র্কার নিয়ে কাজ করেছিল। ওর দ্রুতগতির বাউন্সার হওয়ায় সবসময়ই ওর জন্য কার্যকরী ছিল।