দুবেলা নিউজ ডেস্কঃ ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান উত্তেজনার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সঙ্গে যুক্ত দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে বেঙ্গল স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নলহাটি ও মুরারাইতে একযোগে অভিযান চালিয়ে এই গ্রেফতারি সম্পন্ন হয়। ধৃতরা ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ।
গ্রেফতারকৃত দুই জঙ্গি হলেন নলহাটির চণ্ডীপুর গ্রামের বাসিন্দা আজমল হোসেন (২৮) এবং মুরারাইয়ের পাইকরের বাসিন্দা সাহেব আলী খান (২৮)। এসটিএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, তারা জেএমবি-র মতাদর্শ প্রচার এবং “গাজওয়াতুল হিন্দ” (ভারতে জিহাদি আগ্রাসন) লক্ষ্যে কাজ করছিল। ধৃতরা এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জেহাদি প্রচারণা চালাচ্ছিল এবং মুসলিম যুবকদের মৌলবাদী করে জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত করার চেষ্টা করছিল।
তদন্তে জানা গেছে, আজমল হোসেন এর আগে বাংলাদেশে জেহাদি কার্যকলাপে জড়িত থাকার চেষ্টা করেছিল এবং উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তার সংযোগ ছিল। ধৃতরা আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ এবং বিস্ফোরক তৈরির পরিকল্পনা করছিল। তারা নির্দিষ্ট ব্যক্তি ও স্থানকে লক্ষ্য করে রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডের ছক তৈরি করেছিল। এই মডিউলটি ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের লক্ষ্যে সক্রিয় ছিল।
শুক্রবার ধৃতদের রামপুরহাটের এলডি এসিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করেছে, যাতে এই মডিউলের অন্যান্য সদস্য ও তাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) একটি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন, যা ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০৫ সালে বাংলাদেশের ৬৩টি জেলায় সমন্বিত বোমা হামলা চালিয়ে কুখ্যাতি অর্জন করে। ভারত, বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। বীরভূমে এই গ্রেফতারি ভারতের অভ্যন্তরে জেএমবি-র ক্রমবর্ধমান জাল এবং স্লিপার সেলের উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।
নদিয়ায় সম্প্রতি এক BSF জওয়ানের বাড়িতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নামে হুমকি চিঠির ঘটনার পর এই গ্রেফতারি অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির জটিলতা আরও বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয়তা বাড়াতে পারে।
এসটিএফ-এর এই সাফল্য জঙ্গি নেটওয়ার্ক ভাঙতে গোয়েন্দা তৎপরতার কার্যকারিতা প্রমাণ করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও, প্রশাসন সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। এই ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য জঙ্গি হুমকির গুরুত্ব পুনরায় তুলে ধরেছে।