দুবেলা, স্বস্তিকা বিশ্বাসঃ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের বেতন, ভাতা এবং পেনশন কাঠামো পুনর্মূল্যায়নের দায়িত্বে অষ্টম পে কমিশন গঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কমিশন ঘোষণা করেন এবং ১ জানুয়ারি ২০২৬ তারিখ থেকে এর সুপারিশ কার্যকর করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রতি দশকে একবার গঠিত এই প্যানেল দেশের সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি সামঞ্জস্য করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অষ্টম পে কমিশনের প্রধান লক্ষ্য হলো বর্তমান মুদ্রাস্ফীতি এবং ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়কে মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেসিক বেতন, ভাতা কাঠামো এবং পেনশন ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস করা। কমিশন বেতন কাঠামোর স্বচ্ছতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে একটি নতুন পে ম্যাট্রিক্স প্রবর্তনের প্রস্তাব করছে, যা বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীদের ভূমিকা ও দায়বদ্ধতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। তদুপরি, নিয়মিত “ডিয়ারনেস এলাউন্স” (DA) সমন্বয়ের মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতির চাপ থেকে মুক্ত থাকার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। কমিশন যে সুপারিশগুলো উত্থাপন করেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বেসিক বেতনের ২০–৩৫ শতাংশের মধ্যে বৃদ্ধি। এর ফলে নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারীরা তুলনামূলকভাবে বেশি সুবিধা পাবেন এবং আয়ের বৈষম্য হ্রাস পাবে। নতুন পে ম্যাট্রিক্স প্রবর্তনের ফলে বেতন স্তরগুলো আরও পরিষ্কার ও সুষ্পষ্ট হবে, যা চাকরির বিভিন্ন ধাপ এবং দায়িত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পথ নির্দেশ করবে। পেনশন কাঠামো সংস্কারের মাধ্যমে প্রায় ৬৫ লাখ পেনশনভোগীর আর্থিক নিরাপত্তা জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া, ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর হিসেবে বেসিক বেতনে ১.৯২ থেকে ২.৮৬ পর্যন্ত একটি গুণাঙ্ক প্রযোজ্য করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা নতুন বেতন নির্ধারণে সহায়তা করবে।
অষ্টম পে কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে সরকারের উপর প্রথমবারের মতো প্রায় এক লাখ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ের চাপ পড়বে। তবে দীর্ঘমেয়াদে সরকারি কর্মচারীদের আয় বাড়ার ফলে ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা উস্কে দেবে। এর ফলে সামগ্রিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে। সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা ও মনোবল বৃদ্ধি পেলে তাদের উৎপাদনশীলতাও বাড়বে, যা সরকারি সেবা প্রদান ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
যদিও কমিশনের সুপারিশ সমূহ প্রশংসিত হয়েছে, কিছু বিতর্কও দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ১ জানুয়ারি ২০২৬-এর পূর্বে অবসর নেওয়া পেনশনভোগীরা নতুন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে সংশোধনীগুলো শুধুমাত্র পদ্ধতিগত এবং তা সিভিল ও ডিফেন্স পেনশনভোগীদের মৌলিক সুবিধা পরিবর্তন করে না। তবু বাস্তবায়নের সময়procedural delay–এর কারণে ২০২৭ পর্যন্ত সুপারিশ কার্যকর হতে বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট সকলকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখছে। অষ্টম পে কমিশন দেশের কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের আর্থিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে একটি মাইলফলক স্থাপন করতে যাচ্ছে। বেতন এবং পেনশন কাঠামো পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে কর্মচারীদের আয় বাড়বে, যা দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়ক হবে। যদিও আর্থিক চাপ এবং কিছু বিতর্ক বিদ্যমান, সুপরিকল্পিত ও সমন্বিতভাবে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে এটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।