দুবেলা, মনোমিতা কুন্ডু: নয়াদিল্লির এইমসের শিশু রিউমাটোলজি বিভাগের শীর্ষ চিকিৎসকেরা সম্প্রতি এমন এক বার্তা দিয়েছেন, যা বহু মানুষের ভুল ধারণা ভেঙে দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, বাত একমাত্র বয়স্কদের রোগ। অথচ বাস্তব চিত্র একেবারে উল্টো।বাত জাতীয় অসুখ আজকাল শিশুদের মধ্যেও উদ্বেগজনক হারে দেখা যাচ্ছে। এক বছর বয়সী শিশুও এর কবলে পড়তে পারে — এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই রোগগুলো ‘অটোইমিউন’ অর্থাৎ শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাই উল্টে শরীরের ওপর হামলা চালায়। ফলে জয়েন্ট, পেশি, ত্বক, এমনকি হৃদপিণ্ড, কিডনি বা ফুসফুস পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারে। শিশুরা যখন একটানা জয়েন্টে ব্যথা, ত্বকে ফুসকুড়ি, মুখে ঘা বা জ্বরের মতো লক্ষণে ভোগে, তখন অনেক সময় সেটাকে ভাইরাল ইনফেকশন কিংবা চোট বলেই ভুল বোঝা হয়। এ ভুলের খেসারত দিতে হয় শিশুদেরই — অনেক সময় তা পঙ্গুত্ব, কিডনির ক্ষতি কিংবা স্থায়ী অক্ষমতার রূপ নেয়।
ডঃ পঙ্কজ হরি, এইমসের শিশু রিউমাটোলজি বিভাগের প্রধান, বলেন, “সমাজে এখনো এই ধারণা প্রচলিত যে বাত রোগ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই। অথচ শিশুরাও এ রোগে জর্জরিত হচ্ছে। সমস্যাটা হলো, সময়মতো সঠিক রোগ নির্ণয় না হওয়ায় অনেক শিশুই চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।” জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিস (JIA), লুপাস, ডার্মাটোমায়োসাইটিস, কাওয়াসাকি বা হেনোক-শোনলাইন পুরপুরার মতো রোগগুলিকে অনেক সময় বিরল বলে মনে করা হলেও, একত্রে এরা শিশুদের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার একটি বড় কারণ।
ডঃ নরেন্দ্র বাগরি আরও বলেন, “প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা না পড়লে এই রোগগুলি ভয়ানক মোড় নিতে পারে। হৃদপিণ্ড বা কিডনির ক্ষতি নীরবে শুরু হয় — যখন ধরা পড়ে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।” তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। চিকিৎসাবিজ্ঞানে গত এক দশকে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এখন শুধু স্টেরয়েড নয়, রয়েছে DMARD, বায়োলজিক্স ও উন্নত থেরাপির নানা পথ। তবে সবচেয়ে জরুরি হলো দ্রুত পদক্ষেপ। কারণ চিকিৎসার একটি ‘সোনালী সুযোগের সময়’ থাকে, যা মিস হলে ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে।
শিশুদের বাত শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ও সামাজিক ভাবেও ক্ষতি করে। স্কুলে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে মিশে থাকা — এসব বাধাপ্রাপ্ত হয়। অনেক সময় শিশুদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে যায়, তারা একঘরে হয়ে পড়ে। অতএব, বাবা-মা ও শিক্ষকদের উচিত কিছু লক্ষণে সতর্ক থাকা — দীর্ঘদিনের জয়েন্টে ব্যথা, অজানা জ্বর, ক্লান্তি, ত্বকে দাগ বা ঘা ইত্যাদি অবহেলা না করে অবিলম্বে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া। প্রয়োজনে একজন রিউমাটোলজিস্টের দ্বারস্থ হতে হবে। শেষ কথা, শিশুদের শৈশব যেন ব্যথায় মুছে না যায়। এই চেতনা সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে। সময়মতো চিকিৎসা মানেই শিশুর হাসিমুখে বড় হয়ে ওঠার নিশ্চয়তা।