দুবেলাঃ কী! আবাক হলেন তো!
সন্দেহ নেই। একদম ঠিকই পড়েছেন। যাদের উপার্জন বেশি তারা থোড়িই বেশি কাজ করেন। একবার টাটা বিড়লাদের কথাই ভাবুন না।
ব্যাপারটা কী ভাবে সম্ভব? আসলে, বিষয়টা নিষ্ক্রিয় উপার্জন। যেখানে অর্থই তার মালিকের জন্য খাটে। এই নির্দিষ্ট ধরনের উপার্জনই আপনাকে ধনী করে দিতে পারে। কী ভাবে?
ধরুন, আপনি কোনও ব্যবসা করলেন। অথবা, এমন কোথাও বিনিয়োগ করলেন, যেখানে সম্পদের মূল্য দিনে দিনে বাড়ে। তা হলেই আপনি সম্পদশালী হয়ে উঠবেন। খেয়াল করে দেখেছেন প্রতিটা ধনী ব্যক্তির সাফল্যের পিছনে কিন্তু এই বিষয়টাই রয়েছে। সাধারণত, দশটা পাঁচটার আপিস করে যেটা প্রায় অসম্ভব।
কেন এমনটা হয়? তা উপার্জনের ধরন দেখলেই বুঝবেন? আমরা যা আয় করি তা মূলতঃ দুই ধরনের। সক্রিয় উপার্জন এবং নিষ্ক্রিয় উপার্জন।
সক্রিয় উপার্জন (Active Income)
সারাক্ষণ শারিরীক ও মানসিক কাজ কাজের মাধ্যমে যে উপার্জন হয়, সেটিই আদতে সক্রিয় উপার্জন।
যেমন ধরুন, আপনি চাকরি করে বেতন নিচ্ছেন অথবা কোনও পরিষেবা দিয়ে পারিশ্রমিক নিচ্ছেন, সেটাই তো সক্রিয় ভাবে উপার্জন করা! এখানে উপার্জন হল,আপনার সময়, শ্রম আর প্রতিভার বিনিময়ের ফলাফল।
বিনিময়ে কিছু না দিলে আপনার উপার্জন নেই। আপনি কোনও ভাবে একটু বসে গেলেই আপনার উপার্জনও গায়েব। নিষ্ক্রিয় উপার্জনের ক্ষেত্রে বিষয়টা এক্কেবারে বিপরীত।
সক্রিয় উপার্জনের উদাহরণ(Examples of Active Income)
চাকরি হল সক্রিয় বা অ্যাক্টিভ ইনকামের সবথেকে বড় উদাহরণ। মজুরি ও কমিশন ভিত্তিক আয়ও এক ধরনের সক্রিয় উপার্জন।
ডাক্তার বা উকিলের মতো যারা পেশাগত পরিষেবা দেন তারাও কিন্তু অ্যাক্টিভ ইনকামই করেন।
আরেক ধরনের পেশা দেখবেন, যাঁরা নিজেদের ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেন। সক্রিয় ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে মুনাফা নেন। যেমন ধরুন পাড়ার মুদির দোকানি। তিনি না গেলে তাঁর ব্যবসাও লাটে উঠবে। তা হলে, আপনিই বলুন এটা কোন ধনের উপার্জনের পর্যায়ে ফেলা যায়!
তাই তো আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ নিষ্ক্রিয় উপার্জন। যা অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
নিষ্কৃয় উপার্জন (Passive Income)
এটা খুব মজার একটা উপার্জনের পদ্ধতি। এখানে আপনাকে অর্থের জন্য কঠোর পরিশ্রম করার দরকার হয় না। অর্থই আপনার জন্য পরিশ্রম করবে।
কী ভাবে? এক কথায় বিনিয়োগের মাধ্যমে। এই একটি উপায়ে আপনিও হয়ে উঠবেন বড়লোক।
প্রথাগত কর্মসংস্থানের বিপরীতে হেঁটে বিনিয়োগের মাধ্যমেই নিষ্ক্রিয় উপার্জন করা হয়। বিনিয়োগের অবিশ্যি বিভিন্ন ধরণ রয়েছে। তবে উদ্দেশ্য একটাই, তা হল সম্পদ তৈরি করা।
বড় বড় কোম্পানির মালিক থেকে শুরু করে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসায়ী, শেয়ার অথবা বন্ডে বিনিয়োগকারী এঁরা সবাই প্যাসিভ ইনকাম করেন।
এই প্যাসিভ বা নিষ্ক্রিয় উপার্জনই আপনাকে ধনী বানাতে পারে। এখানে নামমাত্র শারিরীক আর মানসিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন পড়ে। লাগে কেবলমাত্র ধারাবাহিক বিনিয়োগ, সময় এবং ধৈর্য্য। আরও একটা উপাদান প্রয়োজন। তা হল, সঠিক জ্ঞান।
নিষ্কৃয় উপার্জনের উদাহরণ(Examples of Passive Income)
শেয়ার, বন্ড থেকে শুরু করে রিয়েল এস্টেট, এগুলি নিষ্ক্রিয় উপার্জনের অন্যতম উদাহরণ।
এছাড়া চোখের সামনে আরও অনের ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে যেগুলিকে আমরা হতো তেমন কোনও গুরুত্ব দিই না। যেমন ধরুন কোনও বই, গান বা এই জাতীয় সৃষ্টিশীল সম্পদ এছাড়া কোনও ব্যবসায়িক ব্রান্ড অথবা কোনও পণ্য বা পরিষেবার পেটেন্ট।
এ সবের মধ্যে ই-বুক থেকে শুরু করে ডিজিটাল পণ্য অথবা অ্যাফিলেয়েট মার্কেটিং-এর বিষয়ও হতে পারে। এই সমস্ত কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নিষ্ক্রিয় উপার্জন।
সক্রিয় ও নিষ্কৃয় উপার্জনের পার্থক্য (Difference Between Active and Passive Income)
এতক্ষণে নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন! দুটি উপার্জনের উৎসে একটা মজাদার পার্থক্য লক্ষ্য করার মতো। একদিকে সক্রিয় উপার্জনের ক্ষেত্রে যেমন কাজের সঙ্গে লেগেপড়ে থাকতে হয়, অন্যদিকে নিষ্ক্রিয় উপার্জনে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অর্থ উপার্জন করা যায়।
সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া নিষ্ক্রিয় আয় অসম্ভব। আর নিষ্ক্রিয় উপার্জনে অর্থ অনেকটা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মতো আপনার জন্য খাটতে থাকে। যাকে কথায় বলে, টাকায় টাকা বাড়ে।
খেয়াল করে দেখবেন, সক্রিয় উপার্জনে যাঁরা নির্ভরশীল তাদের জীবনে কখনও অভাব যায় না। ইএমআই চলতেই থাকে। অন্যদিকে নিষ্ক্রিয় উপার্জন আপনাকে বিত্তবান করে। নিষ্ক্রিয় উপার্জন ছাড়া লক্ষ্মীলাভ কখনই সম্ভব না। তাই তো সক্রিয় উপার্জনকে নিষ্ক্রিয় উপার্জনে পরিণত করতে জানতে হবে। উপায় একটাই। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানো।
নিষ্কৃয় উপার্জন প্রয়োজন কেন?(Is Passive Income Better?)
আপনাকে যে কোনও একটা পথ বেছে নিতে হবে। একদিকে দশটা পাঁচটার আপিস আর চাপের জীবন। অন্যদিকে জীবনকে উপভোগ করা, আর্থিক স্বাধীনতার পথে হাঁটা আর শেষ পর্যায়ে দুশ্চিন্তাহীন অবসর কাটানো। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কে না চায়! তাই তো প্যাসিভ ইনকাম এত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।
অর্থ দিয়ে সব কিছু কেনা যায় না ঠিই, কিন্তু অনেক সমস্যার সমাধান হয় নিশ্চিত। তাই আর্থিক শ্রীবৃদ্ধির পথে হাঁটতে গেলে নিষ্ক্রিয় উপার্জন প্রয়োজন।
শেষের কথা(Conclusion)
যারা সক্রিয় উপার্জনের উপরে নির্ভরশীল তাঁদের অনেকেকে দেখলে মনে হতে পারে অর্থই যেন তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করে। তা হলে কি জীবীকার জন্য জীবন? টাকাকে জীবনের চালিকাশক্তি হতে দেবেন না। নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিন। অন্ততঃ সে কারণে প্যসিভ ইনকামের ওপরে জোর দিন।
খেয়াল করে দেখেছেন কি, গরীব আর মধ্যবিত্তরা অর্থের জন্য কাজ করে যায়। অন্যদিকে ধনীরা অর্থ সৃষ্টি করে। আসলে সম্পদ বাড়ায়। যে কোনও আয় থেকে ক্রমে সম্পদ বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন। যেটা ভবিষ্যতে প্যাসিভ ইনকাম বাড়াবে।
তাই বলে অর্থের প্রতি অন্ধ আসক্তি যেন আপনাকে পেয়ে না বসে।