দুবেলা, দিশা সাহা মন্ডল: খড়দহে যখন গঙ্গার ঠান্ডা হাওয়া বয় তার সাথে মিশে থাকে মন্দিরের শাখধ্বনি। শহর যতই ব্যস্ত হয়ে উঠুক মন্দিরের মধ্যস্থানে দাঁড়ালে এক অন্যন শান্তির মুখোমুখি হওয়া যায়। মন্দিরটি শুধু একটি স্থাপত্য নয় এক ইতিহাস, বিশ্বাস ও অনুভবের অবিচ্ছেদ্য সমাহার। ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী, এই মন্দিরের সূত্রপাত হয়েছিল কয়েকশো বছর আগে। গৌড়ীয় বৈষ্ণব সংস্কৃতির ছায়া মাথায় রেখে গড়ে ওঠা এই মন্দির শুধু মাত্র ধর্মচর্চা কেন্দ্র ছিল না, এক কালে সমাজ জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
রাসপূনিমা, দোলযাত্রা কিংবা জন্মাস্টমি। প্রতিটি উৎসবের সময় মন্দির হয়ে উঠত প্রানের মেলা। লোককথায় আছে এই মন্দিরে নাকি রাধা কৃষ্ণ স্বয়ং বিরাজমান। অসুস্থতা, মনোবাসনা বা দুর্দিনে এখানে এসে প্রার্থনা করলে তা পূর্ণ হয়, তাই তো আশেপাশের বহু মানুষ শ্যামসুন্দরের কাছে শুধু প্রনাম করেন না প্রানও উজার করেন। এক প্রবীণ ভক্ত বলেন “শিশু বয়সে মায়ের হাত ধরে প্রথম এসেছিলাম আজ ও প্রতি দোলে সেই একই শান্তি ফিরে পাই। এইরকম হাজারো কাহিনী রয়েছে এই মন্দির ঘিরে। বর্তমান সময়ে ও এই বিশ্বাস পুরোপুরি বিলীন হয়নি। আজকের নতুন প্রজন্ম যারা হয়ত রোজ মন্দিরে আসে না তবে বিশেষ দিনে তারা সামিল হন মন্দিরের বিশেষ রীতিনীতিতে। কেউ প্রনাম করেন কেউ ছবি তোলেন আবার কেউ ঘুরতে আসা বিদেশি বন্ধুকে নিয়ে আসে দেখাতে এটাই আমাদের শ্যামসুন্দর বিশ্বাসের রূপ বদলায় তবে তার অস্তিত্ব মুছে যায়নি।
তবে সময়ের সঙ্গে সবকিছুর চ্যালেঞ্জ লক্ষ করা যায়। যুগ পাল্টেছে মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে। অনেকেই মনে করেন আজ ও যন্তের দরকার আছে এই ঐতিহ্যকে সংরক্ষনের জন্য। উৎসবের ভিড়ে মাঝেমধ্যে হারিয়ে যায় আধ্যাত্মিকতার নিঃশব্দতা যা একসময় ছিল মন্দিরের আত্মা। তবে মন্দিরটা ঠিক আগের মতোর রয়েছে প্রত্যেক প্রজন্মের অনুভবের ভর করে। এখানে সময় যেন ধির হয়ে আসে স্মৃতিগুলো জেগে ওঠে। আর সেই নিরব ভালোবাসার তৈরী হয় এক অলিখিত প্রার্থনা যা প্রতিটি ঋদয়ে জেগে থাকে ঠিক যেমন শ্যামসুন্দর আমাদের খড়দহে জেগে রয়েছে চিরন্তন হয়ে।