দুবেলা, রিয়া বিশ্বাস: কালীপুজোর পরদিনই বাঙালির ঘরে আসে ভালোবাসা ও স্নেহে ভরা এক বিশেষ উৎসব ভাইফোঁটা। এই দিনটি শুধু ধর্মীয় বা সামাজিক উৎসব নয়, বরং ভাই-বোনের সম্পর্কের গভীরতার এক প্রতীক। আজ সকাল থেকেই রাজ্যজুড়ে ভাইফোঁটার উৎসব পালিত হচ্ছে আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে। শহর থেকে গ্রাম প্রায় সব জায়গায়ই দেখা গেছে উৎসবের সাজ, হাসি-খুশিতে ভরা পরিবেশ।
সকাল থেকেই বোনেদের হাতে সাজানো ফোঁটার থালা। থালায় সাজানো থাকে চন্দন, ধান, দূর্বা, মিষ্টি আর প্রদীপ। ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে বোনেরা প্রার্থনা করে তাঁর দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনায়। ফোঁটার পর ভাইয়ের হাতে মিষ্টি তুলে দেওয়া হয়, আর ভাইও প্রতিদানে বোনকে উপহার দেয় ভালোবাসার স্মারক হিসেবে। একসঙ্গে খাওয়া, হাসি-আড্ডায় ভরে ওঠে দিনটা। কলকাতার রাস্তায় আজ সকাল থেকেই উৎসবের আমেজ স্পষ্ট। প্রত্যেক মিষ্টির দোকানগুলোতে ছিল ক্রেতাদের লম্বা লাইন। ‘রসগোল্লা’, ‘ল্যাংচা’, ‘সন্দেশ’, ‘চমচম’ সবই বিক্রি হয়েছে ঝড়ের গতিতে। অনেক পরিবার আজ সকালে নিজেদের বাড়িতেই পুজো আর ফোঁটার আয়োজন করেছে। কেউ কেউ আবার একসঙ্গে প্রাতঃভ্রমণ শেষে মন্দিরে গিয়েছেন দেবীর আশীর্বাদ নিতে।
অফিস, স্কুল ও সরকারি অনেক জায়গাতেই আজ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, যাতে সবাই পরিবারের সঙ্গে এই দিনটি উদযাপন করতে পারে। তবে শহরের যাতায়াতে কিছু পরিবর্তন দেখা গেছে। মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভাইফোঁটার দিনে ব্লু ও গ্রিন লাইনে যথাক্রমে ৯০টি ও ৭৮টি কম মেট্রো ট্রেন চলবে, তবে যাত্রীদের সুবিধার্থে অতিরিক্ত ট্রেনেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভাইফোঁটার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। পুরাণ মতে, সূর্যদেবের দুই সন্তান—যম ও যমুনা। দীর্ঘদিন পরে যম যখন তাঁর বোন যমুনার সঙ্গে দেখা করতে যান, তখন যমুনা তাঁর ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেন ও মঙ্গল কামনা করেন। সেই থেকেই শুরু হয় এই প্রথা। বলা হয়, যেদিন বোন ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেয়, সেদিন মৃত্যুর দেবতা যম তাঁর ভাইকে কোনো অনিষ্ট করেন না।
এই বিশ্বাস থেকেই আজও বাঙালি সমাজে ভাইফোঁটা এত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে পালন করা হয়। দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইফোঁটার ছবি, শুভেচ্ছা ও বার্তা ভেসে বেড়াচ্ছে। অনেকে ভিডিও কলে ফোঁটার আচার পালন করেছেন, যারা দূরে আছেন তাদের জন্যও প্রযুক্তি আজ হয়ে উঠেছে ভালোবাসার সেতুবন্ধন। ভাইফোঁটা শুধু ভাই-বোন নয়, পরিবারকেও একত্র করে। ছোট-বড় সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া, গল্প, গান, হাসি-ঠাট্টা—সব মিলিয়ে এক মধুর পরিবেশ তৈরি হয়। অনেক পরিবারে আজ একত্রিত হয়েছে দূর-দূরান্তে থাকা আত্মীয়রাও।
দুবেলা নিউজকে follow করুনঃ
-
https://www.facebook.com/dubelanews
-
https://x.com/dubelanewsdesk
-
https://www.youtube.com/@DUBELANEWS
-
https://www.instagram.com/dubelanews/

প্রতিমুহূর্তের খবর পেতে লাইক করুণ II দুবেলা নিউজ
