জলমগ্ন শহর, কলেজ স্ট্রিটে ভিজে গেল অজস্র বই

Spread the love

দুবেলা, রিয়া বিশ্বাস: কলকাতার প্রাণকেন্দ্র কলেজ স্ট্রিট যেখানে বই মানেই জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কিন্তু সোমবার রাত থেকে টানা ভারী বর্ষণের পর মঙ্গলবার সকালে সেই কলেজ স্ট্রিট যেন পরিণত হলো এক অজানা দুঃস্বপ্নে। চারদিক জলমগ্ন, রাস্তাজুড়ে হাঁটু সমান থেকে কোমর সমান জল, আর সেই জলের নিচেই ডুবে রইল অসংখ্য বইয়ের দোকান। যে গলিগুলোতে প্রতিদিন ছাত্রছাত্রী, গবেষক, পাঠকরা ভিড় জমান, সেখানেই আজ নিস্তব্ধতা কেবল ভাসমান কাগজ, বই আর দোকানদারদের হাহাকার।আর সেই সব ভেজা নষ্ট হয়ে যাওয়া বই ভরতে হচ্ছে আবর্জনার বস্তায়।

শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে টানা বৃষ্টি নামতেই ড্রেন ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকট হয়ে ওঠে। কলেজ স্ট্রিটের মতো ব্যস্ত এলাকা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পরিণত হয় জলাশয়ে। ভাঙা ছাতা, ভিজে কাগজ আর দোকানের ভেতরে জমে থাকা নোংরা জল—সব মিলিয়ে দৃশ্য যেন একেবারে অচেনা। সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে বই বিক্রেতারা। দোকানের ভেতরে স্তূপ করে রাখা মূল্যবান বইগুলো এক রাতেই জল খেয়ে অকারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

পাঠ্যবই, বিরল সংস্করণ, পুরোনো সাহিত্য—সবই ভিজে যাচ্ছে জলস্রোতে। দোকানদারদের অনেকেই ভোর থেকে বালতি, মগ, পাম্প মেশিন নিয়ে জল তোলার প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু ততক্ষণে ক্ষতি হয়ে গেছে অনেকটাই। এক বই বিক্রেতার কথায়, “আমরা সারা বছর ধরে যত্নে বই মজুত রাখি, বৃষ্টির এক রাতেই সব শেষ হয়ে গেল। কে আমাদের ক্ষতি পূরণ করবে?” বহু দোকানদার কাঁদতে কাঁদতে জানিয়েছেন, বই শুকোনোর চেষ্টা করলেও বেশিরভাগই আর বিক্রিযোগ্য থাকবে না।

আরও পড়ুনঃবিহার ও বাংলার ভোটের আগে GST কাঠামো পরিবর্তনে বড় চমক মোদির সরকারের

এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধাও চোখে পড়ার মতো। পরীক্ষার মরসুম সামনে, কিন্তু কলেজ স্ট্রিটে এসে প্রয়োজনীয় বই পাওয়া এখন দুঃসাধ্য। অনেকে প্লাস্টিকের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দোকান খুঁজে ফিরছেন, কিন্তু জলে ভিজে নষ্ট হওয়া বই হাতে তুলে দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই বিক্রেতারা। শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, এই জলাবদ্ধতা আবারও তুলে ধরল শহরের পুরনো সমস্যাকে। কলকাতার ঐতিহ্য কলেজ স্ট্রিটের বুক স্টলগুলোকে রক্ষা করতে না পারলে আগামী দিনে হারিয়ে যাবে এক অনন্য সংস্কৃতি। শহরবাসীরা তাই প্রশ্ন তুলছেন, প্রতিবছর একই দৃশ্য হলে প্রশাসন কেন আগেভাগে প্রস্তুতি নেয় না?

আরও পড়ুনঃ১.৪০ কোটি টাকার ঋণ এড়াতে, মৃত্যুর ভান

এদিকে স্থানীয় মানুষ এবং কিছু স্বেচ্ছাসেবী দল এগিয়ে এসেছেন দোকানদারদের পাশে দাঁড়াতে। কেউ প্লাস্টিকের ত্রিপল টানিয়ে বই বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, কেউ আবার ভিজে বই শুকোনোর ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু তবুও ক্ষতির পরিমাণ এতটাই ব্যাপক যে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। কলকাতার এই কলেজ স্ট্রিট একসময় বিশ্ববিখ্যাত ছিল বইয়ের বাজার হিসেবে। বিদেশি পর্যটক থেকে গবেষক—যারা একবার আসতেন, তারা অভিভূত হতেন এখানকার পরিবেশে। আজ সেই জায়গাতেই বই ভাসছে জলে, যেন শহরের বুকে এক শোকের ছায়া।

আরও পড়ুনঃকাঁচা হলুদ, গুঁড়ো হলুদ নাকি শুকনো হলুদ, কোনটি ভালো জানেন আপনি?

মুষলধারে বৃষ্টি থেমে গেলে হয়তো রাস্তায় জমা জল আস্তে আস্তে নামবে, কিন্তু দোকানদারদের চোখের জল থামবে না সহজে। অজস্র বইয়ের মৃত্যু শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, জ্ঞান-সংস্কৃতিরও বিরাট অপচয়। কলকাতা আবারও প্রশ্নের মুখে—ঐতিহ্য রক্ষার প্রতিশ্রুতি কি শুধুই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি বাস্তবেই কলেজ স্ট্রিটকে রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হবে?

দুবেলা নিউজকে follow করুনঃ

Related posts

Leave a Comment